মুরগির স্তনের পুষ্টির তথ্য এবং স্বাস্থ্য উপকারিতা
চিকেন ব্রেস্ট, বা মুরগির স্তন, একটি জনপ্রিয় এবং পুষ্টিকর খাবার। এটি প্রোটিনের একটি চমৎকার উৎস, এবং এতে ক্যালোরি, চর্বি এবং স্যাচুরেটেড ফ্যাট কম থাকে। চিকেন ব্রেস্টে বিভিন্ন ধরণের ভিটামিন এবং খনিজ রয়েছে যা সুস্বাস্থ্যের জন্য অপরিহার্য।
Chicken Breast Nutrition |
চিকেন ব্রেস্টের পুষ্টিগুণ:
১০০ গ্রাম রান্না করা চিকেন ব্রেস্ট (পাতলা করে কাটা) :
ক্যালোরি: ১৬৫
চর্বি: ৩.৬ গ্রাম
স্যাচুরেটেড ফ্যাট: ১.৩ গ্রাম
মনোস্যাচুরেটেড ফ্যাট: ১.২ গ্রাম
পলিআনস্যাচুরেটেড ফ্যাট: ০.৭ গ্রাম
কোলেস্টেরল: ৮৫ মিলিগ্রাম
সোডিয়াম: ৭২ মিলিগ্রাম
পটাসিয়াম: ৩২০ মিলিগ্রাম
কার্বোহাইড্রেট: ০ গ্রাম
প্রোটিন: ৩১ গ্রাম
ভিটামিন:
ভিটামিন বি১: ০.০৯ মিলিগ্রাম
ভিটামিন বি২: ০.১১ মিলিগ্রাম
ভিটামিন বি৩: ৫.৪ মিলিগ্রাম
ভিটামিন বি৬: ০.৪৮ মিলিগ্রাম
ভিটামিন বি১২: ০.৩৬ মিলিগ্রাম
ফোলেট: ৭ মিলিগ্রাম
প্যান্টোথেনিক অ্যাসিড: ০.৬৯ মিলিগ্রাম
নিয়াসিন: ১১.২ মিলিগ্রাম
চোলিন: ৮৫ মিলিগ্রাম
খনিজ:
সেলেনিয়াম: ৩২ মাইক্রোগ্রাম
ফসফরাস: ২৮০ মিলিগ্রাম
জিঙ্ক: ৩.৪ মিলিগ্রাম
আয়রন: ১.১ মিলিগ্রাম
ম্যাগনেসিয়াম: ২০ মিলিগ্রাম
অন্যান্য:
লিনোলিক অ্যাসিড: ১৬৭৪ মিলিগ্রাম
উল্লেখযোগ্য দিক:
চিকেন ব্রেস্ট প্রোটিনের একটি চমৎকার উৎস, যা পেশী বৃদ্ধি এবং মেরামতের জন্য প্রয়োজনীয়।
এতে চর্বির পরিমাণ কম, বিশেষ করে স্যাচুরেটেড ফ্যাট।
এতে ভিটামিন বি৬, নিয়াসিন, এবং সেলেনিয়াম সহ বিভিন্ন ভিটামিন এবং খনিজ রয়েছে।
এটি লো-ক্যালোরি খাবার, যার মানে এটি ওজন কমানোর জন্য উপযুক্ত হতে পারে।
চিকেন ব্রেস্ট রান্নার বিভিন্ন উপায়:
গ্রিল করা: এটি চিকেন ব্রেস্ট রান্নার স্বাস্থ্যকরতম উপায়।
বেক করা: এটি চিকেন ব্রেস্ট রান্নার আরেকটি স্বাস্থ্যকর উপায়।
ভাপানো: এটি চিকেন ব্রেস্ট রান্নার একটি চমৎকার উপায় যা চর্বি এবং ক্যালোরি কমাতে সাহায্য করে।
ভাজা: এটি চিকেন ব্রেস্ট রান্নার একটি জনপ্রিয় উপায়, তবে এটি চর্বি এবং ক্যালোরি বৃদ্ধি করে।
সতর্কতা:
চিকেন ব্রেস্ট ভালোভাবে রান্না করা গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এতে ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া থাকতে পারে।
চিকেন ব্রেস্ট খাওয়ার পর আপনার যদি কোনো অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়, তাহলে অবিলম্বে একজন ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করুন.
মুরগির মাংস সংরক্ষণ ও খাদ্য নিরাপত্তা:
Chicken Breast Nutrition |
মুরগির মাংস কেনার পর:
ঠান্ডা রাখুন: মুরগির মাংস কিনে আনার পর দ্রুত ফ্রিজে (৪°C ) রাখুন।
প্যাকেজিং: মুরগির মাংস বায়ুরোধী পাত্রে বা প্লাস্টিকের ব্যাগে রাখুন।
অন্যান্য খাবার থেকে আলাদা রাখুন: কাঁচা মুরগির মাংস অন্যান্য খাবার থেকে আলাদা রাখুন, যাতে ক্রস-কন্টামিনেশন এড়ানো যায়।
ফ্রিজে সংরক্ষণ:
কাঁচা মুরগির মাংস: ১-২ দিনের জন্য ফ্রিজে সংরক্ষণ করা যাবে।
রান্না করা মুরগির মাংস: ৩-৪ দিনের জন্য ফ্রিজে সংরক্ষণ করা যাবে।
ফ্রিজারে সংরক্ষণ:
কাঁচা মুরগির মাংস: ৯-১২ মাসের জন্য ফ্রিজারে (-১৮°C বা ০°F) সংরক্ষণ করা যাবে।
রান্না করা মুরগির মাংস: ২-৬ মাসের জন্য ফ্রিজারে (-১৮°C বা ০°F) সংরক্ষণ করা যাবে।
ডিফ্রোস্টিং:
ফ্রিজে: মুরগির মাংস রাতারাতি ফ্রিজে ডিফ্রোস্ট করুন।
ঠান্ডা জলে: মুরগির মাংস ঠান্ডা জলে ডিফ্রোস্ট করতে পারেন।
মাইক্রোওয়েভে: মুরগির মাংস মাইক্রোওয়েভে ডিফ্রোস্ট করতে পারেন, তবে সাবধানে ।
খাদ্য নিরাপত্তা:
হাত ধোয়া: মুরগির মাংস স্পর্শ করার আগে এবং পরে সাবান ও জল দিয়ে হাত ধুয়ে নিন।
পৃষ্ঠ পরিষ্কার করা: মুরগির মাংস কাটার পর পৃষ্ঠ এবং কাটিং বোর্ড সাবান ও জল দিয়ে পরিষ্কার করে নিন।
অভ্যন্তরীণ তাপমাত্রা: মুরগির মাংস রান্নার সময় অভ্যন্তরীণ তাপমাত্রা ১৬৫°F (৭৪°C) এ পৌঁছেছে কিনা তা নিশ্চিত করুন।
সঠিকভাবে রান্না: মুরগির মাংস ভালোভাবে রান্না করা গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এতে ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া থাকতে পারে।
মুরগির মাংসের স্বাস্থ্য উপকারিতা:
প্রোটিনের উৎস: মুরগির মাংস প্রোটিনের একটি চমৎকার উৎস, যা পেশী বৃদ্ধি, মেরামত এবং রক্ষণাবেক্ষণের জন্য অপরিহার্য। এটি শরীরের বিভিন্ন টিস্যু তৈরি এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতেও সাহায্য করে।
কম চর্বি: মুরগির মাংসে অন্যান্য মাংসের তুলনায় কম চর্বি থাকে। তাই এটি ওজন কমানোর চেষ্টা বা হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে চান তাদের জন্য উপকারী।
হাড়ের স্বাস্থ্য: মুরগির মাংসে প্রোটিন এবং ফসফরাস থাকে যা হাড়ের স্বাস্থ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এটি হাড়ের ঘনত্ব বৃদ্ধি করে এবং অস্টিওপোরোসিসের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।
মানসিক স্বাস্থ্য: মুরগির মাংসে ট্রিপটোফ্যান নামক অ্যামিনো অ্যাসিড থাকে যা সেরোটোনিনের উৎপাদনে সাহায্য করে। সেরোটোনিন একটি নিউরোট্রান্সমিটার যা মেজাজ নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা: মুরগির মাংসে থাকা জিঙ্ক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। এটি শরীরকে সংক্রমণ থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে।
চোখের স্বাস্থ্য: মুরগির মাংসে লুটেইন এবং জিয়াজ্যানথিন নামক দুটি ক্যারোটিনয়েড থাকে যা চোখের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। এগুলি চোখের ম্যাকুলার ডিজেনারেশন এবং ছানি পড়ার ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।
কিছু টিপস:
মুরগির মাংসের ত্বক অপসারণ করে রান্না করলে চর্বির পরিমাণ আরও কমাতে পারবেন। ভাজার পরিবর্তে সেদ্ধ, ঝোল দিয়ে রান্না করা বা গ্রিল করা মুরগির মাংস খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। মুরগির মাংসের সাথে শাকসবজি খেলে এর পুষ্টিগুণ আরও বৃদ্ধি পায়।
মনে রাখবেন:
অতিরিক্ত পরিমাণে মুরগির মাংস খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। গর্ভবতী এবং স্তন্যদানকারী মায়েদের মুরগির মাংস ভালোভাবে রান্না করে খাওয়া উচিত।
মুরগির মাংসের অ্যালার্জি: মুরগির মাংসের অ্যালার্জি হলো একটি খাদ্য অ্যালার্জি যেখানে রোগীর শরীর মুরগির মাংসের প্রতি অস্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া প্রদর্শন করে। এই অ্যালার্জি যেকোনো বয়সে দেখা দিতে পারে, তবে শিশুদের মধ্যে এটি বেশি দেখা যায়।
লক্ষণ:
মুরগির মাংসের অ্যালার্জির লক্ষণগুলি হালকা থেকে তীব্র হতে পারে। কিছু সাধারণ লক্ষণ হলো:
ত্বক: ফুঁসকুড়ি, চুলকানি,
পেট: বমি বমি ভাব, বমি, পেটে ব্যথা, ডায়রিয়া
শ্বাস: হাঁচি, নাক বন্ধ হওয়া, শ্বাসকষ্ট
অন্যান্য: মাথা ব্যাথা, চোখ জ্বালা,
Chicken Breast Nutrition |
কারণ:
মুরগির মাংসের অ্যালার্জির কারণ হলো শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার ভুল প্রতিক্রিয়া। যখন একজন অ্যালার্জিক ব্যক্তি মুরগির মাংস খায়, তখন তার শরীর ইমিউনোগ্লোবিন ই (IgE) নামক অ্যান্টিবডি তৈরি করে। এই অ্যান্টিবডিগুলি হিস্টামিন এবং অন্যান্য রাসায়নিক পদার্থ নিঃসরণ করে যা অ্যালার্জির লক্ষণগুলির জন্য দায়ী।
চিকিৎসা: মুরগির মাংসের অ্যালার্জির কোনো নিরাময় নেই। চিকিৎসার মূল লক্ষ্য হলো অ্যালার্জির লক্ষণগুলি নিয়ন্ত্রণ করা।
প্রতিরোধ: মুরগির মাংস এবং এর সমস্ত উপাদান সম্পূর্ণভাবে এড়িয়ে চলা হলো অ্যালার্জি প্রতিরোধের সবচেয়ে কার্যকর উপায়।
ওষুধ: অ্যালার্জির লক্ষণগুলি উপশম করার জন্য অ্যান্টিহিস্টামাইন,
গুরুত্বপূর্ণ: যদি আপনার মনে হয় আপনার বা আপনার সন্তানের মুরগির মাংসের অ্যালার্জি থাকতে পারে, তাহলে একজন ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করুন। অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়া তীব্র হলে অবিলম্বে জরুরি চিকিৎসা সেবা নিন।
মনে রাখবেন: মুরগির মাংসের অ্যালার্জি একটি গুরুতর অবস্থা হতে পারে। অ্যালার্জি সম্পর্কে সচেতন থাকা এবং সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ করা গুরুত্বপূর্ণ।
শেষকখা:
0 মন্তব্যসমূহ